Thursday, September 11, 2025

ডাকসুতে শিবিরের নিরঙ্কুশ জয়, নেপথ্যে কয়েক কারণ

আরও পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বা ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের প্রায় নিরঙ্কুশ জয় হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে এবারই প্রথম এমন বিজয় অর্জন করল তারা।

নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বিজয়ীদের সাথে তাদের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর ভোটের দূরত্বও বেশ কয়েক হাজারের। ডাকসুর ভিপি পদে জয়লাভ করা সাদিক কায়েমের সঙ্গে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদল সমর্থিত প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খানের ভোটের ব্যবধান নয় হাজারেরও বেশি। নির্বাচনের ফলাফল ঘাঁটলে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি পদের বিপরীতেই এই ব্যবধান লক্ষ্যণীয়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিগত ২০ – ২৫ বছরের প্রকাশ্য ছাত্র রাজনীতিতে ছাত্র শিবিরের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। প্রশ্ন উঠেছে, ছাত্রশিবিরের ডাকসু ও হল সংসদের এই বিজয়ে তাহলে কোন কোন ‘ফ্যাক্টর বা অনুঘটক’ কাজ করেছে?

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ডাকসুর সাবেক ছাত্রনেতারা মনে করেন, জুলাই–আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের মূল পরিকল্পনা থেকে মাঠ পর্যায়ের সব নেতৃত্বে শিবিরই ছিল, এমন ন্যারেটিভই ডাকসু নির্বাচনে তাদের জয়লাভের অন্যতম একটি কারণ।

বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, অন্য ছাত্র সংগঠনের ‘পদ-পদবি নিয়ে বা আন্ডারগ্রাউন্ডে’ থেকেও নিজেদের সংগঠনের কর্মকাণ্ড চালিয়ে গেছে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীদের অনেকে। তারাই আবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ছাত্রশিবিরের ব্যানারে প্রকাশ্যে এসেছেন।

আরও পড়ুনঃ  ডাকসুর বিজয়ীদের নিয়ে জামায়াত আমিরের বিবৃতি

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব কার?

বুধবার সকালে প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণার পর ডাকসুর নবনির্বাচিত ভিপি ও ছাত্রশিবির নেতা সাদিক কায়েম বলেন, যে কেউ যে মতেরই হোক না কেন সবাই একসঙ্গে কাজ করব। এ সময় তিনি প্রথমেই জুলাই গণ অভ্যুত্থানে নিহতদের স্মরণ করেন। এই জয়ে জুলাইয়ের আকাঙ্খার বিজয় হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। অর্থাৎ গণঅভ্যুত্থানকেই ডাকসুর নির্বাচনে বিজয়ের ক্ষেত্রে মূল প্রেক্ষাপট বলে মনে করেন তিনি।

ছাত্রশিবিরের ঢাবি শাখার সভাপতি ও ডাকসুর নবনির্বাচিত জিএস এস এম ফরহাদ জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যাকে যোগ্য মনে করেছেন তাকেই ভোট দিয়েছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন মনে করেন, গত এক বছরে জুলাইয়ের গণ অভ্যুত্থানের নেতৃত্বের যে ন্যারেটিভ দাঁড় করানো হয়েছে, তা ভোটারদের প্রভাবিত করেছে। তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের মালিকানা নিয়ে যে বাহাস ছিল, সেখানে শিবির বলেছে, গণ অভ্যুত্থানের মূল পরিকল্পনা থেকে আন্দোলনের নেতৃত্বের সব কিছুতে যেমন-প্রোফাইল লাল করা, এক দফার দাবি, স্লোগান সবকিছুর মূলে ছিল তারা। এটা গুরুত্বপূর্ণ যে তারা তখন পরিচয় সামনে আনেনি।

আরও পড়ুনঃ  এক জেলায় হরতাল, এক জেলায় অবরোধ চলছে

অন্যদিকে, ডাকসুর সাবেক ছাত্র নেতা মুশতাক হোসেন মনে করেন, স্বাধীনতার পর থেকে যে ধারার রাজনীতি প্রচলিত তার থেকে বর্তমান প্রজন্ম আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। নানা বৈষম্যের বিপরীতে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর নানা প্রতিশ্রুতিতে তাদের সুযোগ দেওয়ার কথা তরুণ প্রজন্ম বিবেচনা করেছে। ১৯৮৯-৯০ সালে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ থেকে ডাকসুর জিএস নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। একইসময়ে ছাত্রশিবিরও নির্বাচন করেছিল বলে জানান তিনি। এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ‘সম্ভবত তাদের একটা চান্স দিতে চাচ্ছে’ বলে মত দেন এ বিশ্লেষক।

তিনি বলেন, জুলাই গণ- অভ্যুত্থানে র‍্যাডিকেল ইসলামিস্ট শক্তি যে ভূমিকাটা নিয়েছে, সেটা না হলে শেখ হাসিনার শক্তিশালী শাসনের হাত থেকে মুক্ত হওয়া যেতো না। এটি সিমপ্যাথি হিসেবে হয়তো কাজ করেছে। তবে শিবিরও যদি ধর্মীয় ফ্যাসিবাদী পথে যায় তবে তাদের বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ সংঘটিত হতে বেশি সময় লাগবে না।

ছাত্রদলসহ অন্যদের বিপর্যয় কেন

গণ অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখ সারি বেশ কয়েকজন নেতাও ডাকসুর এই নির্বাচনে অংশ নেন। কিন্তু ভোটে হেরে গেছেন তারা। ছাত্রদলেরও বিপর্যয় হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  সচিবালয় অভিমুখে ইশরাক সমর্থকদের লংমার্চ কর্মসূচিতে পুলিশের বাধা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন মনে করেন, ওই হারের পেছনে কাজ করেছে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী তাদের অনেকের বিরুদ্ধেই চাঁদাবাজি, দুর্নীতি বা বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ ওঠেছে। তরুণ প্রজন্মের ভোটারদের বিবেচনায় এই বিষয় প্রাধান্য পেয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের হলগুলোর প্রায় বেশিরভাগ ভোটই পড়েছে ছাত্রশিবিরের ঝুলিতে। ৫ আগস্টের পরবর্তী গত এক বছরে সরকারের ওপর কোন দলের নিয়ন্ত্রণ বা প্রভাব বেশি, কে দেশ চালাচ্ছে- এমন বিষয়ও ডাকসু ও হল সংসদের ভোটাররা মাথায় রেখেছেন।

তিনি বলেন, কারা সরকারের ওপর অদৃশ্য প্রভাব রাখছে, সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করছে এসব বিষয় মাথায় রেখেছেন ভোটাররা। কারণ এদেশে ভোটাররা চিন্তা করেন, কে ক্ষমতায় আসতে পারবে? আমার একটা ভোট নষ্ট করবো না? এমন বিবেচনাও দেশের স্বাধীনতার পরে নবমবারের মতো অনুষ্ঠিত ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের ফলাফলে প্রভাব ফেলেছে।

উল্লেখ্য, এই নির্বাচনের ফলাফলকে প্রত্যাখ্যান করেছেন পরাজিত ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সম্মুখ সারির সাবেক নেতা উমামা ফাতেমা।

আপনার মতামত লিখুনঃ

আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ